মশলা ব্যবসা

 

মশলার ব্যবসা শুরু করার একটি সম্পূর্ণ গাইড

যেকোনো সুস্বাদু রান্না করার জন্যে মসলার অবদান অনস্বীকার্য  পৃথিবীতে মসলা উৎপাদক দেশ গুলির মধ্যে ভারত অন্যতমপ্রতিবছর বিদেশে বিভিন্ন রকম মসলা রপ্তানি করে বেশ মোটা এমাউন্টের বিদেশী মুদ্রা অর্জন করে  তাই মশলার ব্যবসা শুরু করা একটি খুব লাভজনক ব্যবসায়ের বিকল্পআর গোটা মসলা হোক বা গুঁড়ো মসলা তৈরী করে প্যাকেটজাত করে বিক্রয় করা যে কোনো ব্যাবসায়ির জন্যে স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে বেশি লাভ করার রাস্তা খুলে যাওয়া হোম বেসড হোক বা ছোটো খাটো কোনো কারখানা যে কারুর জন্যেই স্পাইস বিসনেস বা মসলার ব্যবসা খুব লাভজনক একটা সমাধান এমনকি অনেক মহিলারাও মসলার ব্যবসা করে থাকেন অনেকে হোম বেসড মসলা তৈরী করে বিভিন্ন কোম্পানিতে সেগুলো সার্ভ করেনবিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন

মসলা ব্যবসায়ের ফলে কি কি সূবিধা হতে পারে ? 

যে কোনো রান্না করার জন্যে সব ধরণের মশলা গুঁড়ো ব্যবহার করা হয় এবং সেটা খুব সুদক্ষ ভাবেএটা সবারই জানা বিদেশ থেকে যখনই কেউ আমাদের দেশে এসেছেকোনো খাবার খেয়েছে সেই  খাবার সবসময় প্রশংসিত হয়েছে একথা ঠিকই রান্নায় মসলার স্পর্শ আবশ্যক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে প্রতিটি রেসিপিতে এক বা একাধিক ধরণের মশালা যোগ করা হয়  যে কোনো খাবারের সুগন্ধরং এবং ভাল স্বাদ আনার জন্যে বিভিন্ন মসলাই আসল কারণ   

যে মসলা গুলো ব্যবহার করা হয় তাদের মধ্যে সাধারণ মশলার নাম গুলি হল হলুদ গুঁড়া , মরিচ গুঁড়োধনিয়া গুঁড়োজিরা গুঁড়া ইত্যাদি এবং গোটা মশলার মধ্যে আছে এলাচগোলমরিচজিরাতেজপাতাদারুচিনি এবং আরও অনেক কিছু যেগুলি সাধারণত কোনো খাবারে গন্ধ আনতে সাহায্য করে সুতরাংমশলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা সব দিক থেকেই রয়েছে

যে কোনো ব্যবসা শুরু করতে হলে কয়েকটি ব্যাপারে ভীষণ ভাবে সতর্ক থাকতে হয়সেই ব্যবসায় লাভের পরিমান কত হবেকিভাবে লাভ বেশি করা যাবেকিভাবে বিক্রি বেশি করা যাবেকোন কোন প্রোডাক্টের চাহিদা বেশিকোন কোন প্রোডাক্ট মানুষ অল্প পরিমানে কেনেএবং যখন এটা মসলার ব্যবসা তাই কোন মসলা কেনার জন্যে মানুষের ঝোক বেশি থাকেকোন মসলা দামিকোন মসলার গুঁড়ার চাহিদা বেশি থাকেগোটা কোন মসলা বেশি বিক্রি হয় সব টাই মসলার ব্যবসার বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্ত এই সব ব্যাপারগুলো তোমাকে ব্যবসা শুরু করার আগে ভাবতে হবে কারণ এগুলোই তোমাকে সাহায্য করবে কোন মসলার স্টক তোমার দোকানে কিভাবে করবে কোন প্রোডাক্টের কিরকম সাইজে প্যাকেট করলে ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে 

যেহুতু সব মানুষই লুস কোনো প্রোডাক্ট থেকে প্যাকেটজাত দ্রব্য বেশি পছন্দ করে এই প্যাকেট গুলো অনেকদিন ফ্রেশ থাকেবা হাতে হাতে নোংরা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে , তাই মসলার ব্যাবসায় প্যাকেজিং একটা অন্যতম বিষয়  ধরো গোলমরিচের মতো একটা মসলা , যেটা যথেষ্টই দামি মসলার মধ্যে অন্তর্ভুক্তঅনেকের পক্ষেই সেটা ১০০ গ্রাম একেবারে কেনা সম্ভব নয়তাই তোমাকে বুঝে ১০ গ্রাম২৫ গ্রাম বা ৫০ গ্রামের প্যাকেট বেশি করে তৈরী করে রাখতে হবে  

মানুষের পছন্দ সময়ের সাথে বদলে যায় , হয়তো ছয় মাস আগে যে প্রোডাক্টটা সবথেকে বেশি বিক্রি হতো সেটা এখন অনেকটাই নিচের দিকে  মানুষ সেই মসলা পছন্দ করছে নাএবার তুমি যদি সেই জিনিসটাই বেশি করে কয়মাস আগে তৈরী করে রেখে দিলেভাবো সেটা তোমার জন্যে কতটা হতাশার হতে পারেতাই প্রথম থেকে স্মার্ট এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রসেসে বিসনেস করে হবে তোমার মৌলিকত্ব  

তুমি কখনোই চাইবে না ব্যবসা শুরু করেই কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে আর তাই মসলার উপযুক্ত ব্যবসাকে চিনে নিতে তোমার দোকানের পসিশনকেও সঠিক ভাবে বিবেচনা করতে হবে সেটা যেন সঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে সাজানো হয় ,প্যাকেট গুলো যেন দোকানে কাস্টমার এলে সবার সামনে দেখতে পায়

মসলার ব্যবসা শুরু করার জন্যে যে বিষয় গুলো জানা উচিত-

তোমার ব্যবসা ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যাই হোক না কেনো তোমাকে কিছু নিবন্ধকরণ এবং লাইসেন্স পেতে হবে তার মধ্যে ফার্মস রেজিস্ট্রার ছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ান পার্সন কোম্পানী রূপে প্রতিষ্ঠা করলে তোমার জন্যে ভালো হবে  

  • তোমাকে প্রথমে স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে যেটা খুবই দরকারি
  • দ্বিতীয়ত উদ্যোগ আধার পাওয়া এবং কোম্পানি নিবন্ধকরণ করতে হবে তবে এগুলো ঐচ্ছিক  এটির  সাহায্যে তুমি  সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠবে
  • তোমাকে খাদ্য ব্যবসায়ের লাইসেন্স অথবা বিএসটিআই লাইসেন্স জোগাড় করতে হবে 
  • তুমি যদি বিশ্ববাজারের বা ইন্টারন্যাশনাল ক্ষেত্রে কাজ করার পরিকল্পনা করে থাকো ,তবে তোমার আইইসি বা আমদানি রফতানির কোড দরকার হবে  
  • তোমাকে সমস্ত এফপিও রেগুলেশন মেনে চলতে হবে 
  • এছাড়াওতোমার বিআইএস শংসাপত্র নিতে হবে গ্রাউন্ড মশলার জন্য আইএসআই স্পেসিফিকেশনগুলি ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে সেগুলো তোমাকে মসলা তৈরির সময় মনে রাখতে হবে গ্রাউন্ড মশলার অন্তর্ভুক্ত হলো চিলি পাউডার বা লঙ্কার গুঁড়াধনে গুঁড়াহলুদ গুঁড়াকারিপাতার গুঁড়াএবং এর সাথে মশলা এবং মশালার নমুনা  পরীক্ষার পদ্ধতি  নিবদ্ধকৃত থাকে  
  • সবশেষে তোমাকে  শংসাপত্র পাওয়ার জন্যে পরামর্শ দেওয়া হবে  

মশলার ব্যবসায় এই প্রয়োজনগুলো ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা আছে যেমন 

রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্স পাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাথমিক জিনিস যেমন কাঁচামালযন্ত্রপাতি  সরঞ্জামও প্রয়োজন এছাড়াওতোমাকে তোমার মশলা ব্যবসায়ের জন্যে কত খরচ করতে হবে তার একটা প্লানিং করতে হবে  মশলা গুঁড়ো তৈরির শিল্প বা কারখানা গুলিকে প্রায় 500 বর্গফুট উচ্চতায় একটি জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্যে পরামর্শ দেওয়া হয়যেখানে তুমি পুরো জায়গাটিকে কয়েকটা বিভাগে ভাগ করতে পারবে  একটি বিভাগ টুকরো বা খন্ড গুলো প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য হওয়া উচিত এবং দ্বিতীয় ভাগটি মশলা প্যাকিংয়ের জন্য বরাদ্দ করা উচিত

 ছাড়াও তোমার একটি বাণিজ্যিক অঞ্চল পছন্দ করা উচিত যেখানে জল এবং বিদ্যুত সরবরাহের মতো মৌলিক সুবিধা পর্যাপ্ত পরিমাণে উপলব্ধ এছাড়াও,তুমি যদি হোমভিত্তিক মশলা ব্যবসায স্থাপন করতে চাও  তাহলে পর্যাপ্ত জায়গা আছে তা নিশ্চিত করতে হবে

কাঁচামাল সংগ্রহ

আপনার মশলা শিল্পকে সফল করার জন্য প্রাথমিক এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান  কাঁচামালযেগুলো  গোটা মশলা বিক্রি হয় না  তুমি যে আইটেমগুলিকে পাইকারিভাবে কিনে ব্যবসা শুরু করতে পারো সেগুলো হলো লঙ্কাধনে , জিরা , মেথি , সরষে , হলুদ , মরিচপপিসিডমৌরি বীজইত্যাদি অনুমোদিত বা খাদ্যগ্রেড প্যাকিং উপকরণঅনুমোদিত খাবারের রঙ এবং সংরক্ষণকারীও তোমাকে জোগাড় করতে হবে  

মসলা তৈরী করার জন্যে যে যন্ত্রপাতি গুলো তোমার লাগবে তার মধ্যে ইমপ্যাক্ট পালভারাইজারস্পাইস মিলপাউন্ডিং মেশিনডাবল স্টেজ পুলভারাইজার এগুলো প্রথম স্তরেই থাকবে  এছাড়াও প্যাকেজিং মেশিনরোস্টারকম্প্রেসর , মশলা পেষকওজন স্কেল এগুলো থাকতেই হবে 

Comments

Popular posts from this blog

ক্ষুদ্র ব্যবসাকে বড় করার জন্য এই বিষয় গুলি আজ থেকেই কাজে লাগান

অভ্যন্তর নকশা ব্যবসায়