পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম ও মনে রাখার সহজ টেকনিক

 পৃথিবীতে সবার মা-বাবাই চান যে আমার সন্তান ভাল পড়াশোনা করুক। তাই বেশি বেশি পড়াশোনা করা জন্য তাগিদ দেন। বেশি করে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে ভালো রেজাল্ট হবে। ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হওয়া যাবে। শিক্ষার্থীরাও ভালো রেজাল্টের জন্য এবং ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার জন্য নাকমুখ গুঁজে পড়ার টেবিলে বসে থাকে। কিন্তু অনেকেই পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম ও মনে রাখার সহজ টেকনিক জানে না। সে ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এত পরিশ্রম করার পরও ফলাফল ভালো হচ্ছে না।

অথচ দেখা যায় পাশের বাড়ির ছেলেটা সারাদিন ঘোরাফেরা, খেলাধুলা করেও পরীক্ষায় অনেক ভালো ফলাফল করছে। এর কারণ কি শুধুই মেধার পার্থক্য? কখনোই নয়! সৃষ্টিকর্তা সবাইকেই সমান মেধা-বুদ্ধি দিয়ে পাঠিয়েছেন, কিন্তু কেউ মেধার সঠিক ব্যবহারই ক্লাসের ফার্স্ট বয় হয় আবার কেউ লাস্ট বয়ের ব্যবধান তৈরি করে দেয়।

সমাজের শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে আমরা অনেকেই মনে করি যে, বেশি বেশি পড়লেই ফলাফল ভালো হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মূল কথা হলো পড়াশোনায় কঠোর পরিশ্রম করার চেয়ে সময়মত মনোযোগ দিয়ে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী পড়াশোনা করলে অনেক ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়।

সঠিক নিয়মে পড়ালেখা করার নিয়ম 

দৈনন্দিন পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম ও মনে রাখার সহজ টেকনিক বা পদ্ধতিতে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন অনেক গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে। পরীক্ষার ফলাফল ভালো করার পেছনের মূলমন্ত্রগুলো কী কী দেখা যাক।

একটানা অনেকক্ষণ পড়া নয়

অনেক বিজ্ঞানীরা বলেন, মস্তিষ্কের তথ্য-উপাত্ত ধারণ করার ক্ষমতা টানা ২৫-৩০ মিনিট পরিশ্রমের পর হ্রাস পেতে শুরু করে। সুতরাং একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা বই নিয়ে পড়া লেখা করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। পড়ার সময়টুকু ছোট ছোট ভাগে আলাদা আলাদা করে টার্গেট করে সাজিয়ে নিতে হবে।

প্রত্যেকটা ভাগ শেষ হওয়ার পর পাঁচ মিনিট বিরতি নিতে হবে। এই সময়টুকু তোমার যা করতে ভাল লাগে যেমন, কিছু নাস্তা খাওয়া, টিভি দেখা, ফেসবুকে একবার ঢুঁ মেরে আসা ইত্যাদি এই সময়টুকুতেই করবে। তারপর সতেজ মনে আবার পড়াশোনা করতে শুরু করবে। 

মুখস্থ নয় বুঝে বুঝে পড়া

ছোটবেলাই আমাদের ছড়া, কবিতা ইত্যাদি দাঁড়ি-কমাসহ মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লেখতে হত। এইভাবে ছোট বেলা থেকে লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে যে সবকিছু মুখস্থ করে ফেলার। এই মুখস্থ করে ফেলার অভ্যাস খুবই ভুল একটি পদ্ধতি। অনেকেই আছে, যাদের কোনো কিছুর সংজ্ঞা বা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে হুবুহু বইয়ের সংজ্ঞা বা উত্তর গড়গড় করে বলে দিতে পারবে। কিন্তু ব্যাখ্যা করতে বললেই আর কোন উত্তর দিতে পারে না। 

বর্তমান সৃজনশীল  প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষায় এই মুখস্থবিদ্যা নির্ভরতা একদমই কাজ করবে না ভালো ফলাফল করতে। সুতরাং বইয়ের সংজ্ঞা মুখস্থ করা বাদ দিয়ে মূল কথাটা  বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। কেননা যতবার মুখস্থ করবে ততবার  ভুলবে, কিন্তু একবার ভালোভাবে বুঝে নিয়ে পড়তে পারলে তা কোনো দিনও ভুলবে না!

বিভিন্ন স্থান থেকে পড়া

বুঝে বুঝে পড়ার একটি ভাল উপায় হচ্ছে একই টপিক বিভিন্ন স্থান থেকে পড়া। শুধুমাত্র একটি বই থেকে পড়লে সেটি থেকে ভাল ফলাফল করার সম্ভাবনা অনেক কম । সুতরাং সম্ভাব্য সবরকম স্থান বা সোর্স থেকে শেখার চেষ্টা করতে হবে। বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করতে হবে, বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন রকম বই থেকে পড়তে হবে। 

উপরের ক্লাসের বড় ভাই বা আপুদের সাহায্য নিতে হবে। সাথে ইন্টারনেট থেকেও একটু খুঁজলেই খুব ভালো শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট পাওয়া যায়। সেখান থেকেও পড়তে হবে।

অন্যকে শেখানো

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন, “ কোন একটা বিষয় তোমার পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত হবে তখনই, যখন সেই বিষয়টি তুমি কাউকে ভালভাবে বুঝিয়ে বলতে পারবে”। অন্য কাউকে বুঝালে সেটি ধীরে ধীরে তোমার মনের গভীরে ঢুকে যাবে। কেননা, যেকোন বিষয় বারবার প্রাক্টিস করলে সেটা আর সহজে ভুলা যায় না। 

নিবিড় মনোনিবেশ

একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক কাজ করতে গেলে কোনটিই ভালভাবে করা হয় না। যখন পড়তে বসবে, তখন সম্পুর্ণ মনোযোগ দিতে হবে বইয়ের পাতায়। মনোযোগে বাধা দান করার মত যা কিছু আছে পাশে আছে, সবকিছু দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। অল্প সময় পড়লেও ১০০ শতাংশ মনোযোগের সাথে পড়তে হবে।

ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরি করা

আমরা অনেকেই বছরের শুরুতে লক্ষ্য ঠিক করি যে, “এইবছর ফাটায়ে পড়াশোনা করবো”  এবং বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা “লক্ষ্য” হয়েই থেকে যায়। আদৌ কার্যকরী হয়ে উঠেনা। 

সুতরাং প্রতিদিন ছোট ছোট টার্গেট বা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আমি এই পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে চাই। খুব দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যানে না গিয়ে  টার্গেট করা যায় যে, আমি আজকে এই অধ্যায় শেষ করবো। এরকম কয়েক ঘন্টার বা একদিনের প্ল্যান ঠিক করতে হবে এবং সেটা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিদিন এরকম ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করতে করতে বছরের শেষে গিয়ে দেখা যাবে যে, সত্যিই  সারা বছরজুড়ে অনেক ভালো পড়াশোনা হয়েছে।

আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করা 

পড়াশোনাকে আনন্দের সাথে গ্রহন করতে হবে। যে কোন বিষয় কঠিন করে নিলে সেটা আরো কঠিন মনে হয়। পড়াশোনা খেলার ছলে, গল্পের ছলে, ছন্দের তালে তালে পড়লে তা আরো সহজ হয়ে যায়। কেননা যে কেউ গল্পকে ভালবাসে আর গল্প বলতেও ভালবাসে। 

কিভাবে স্মৃতিশক্তির যত্ন নিবেন?

আমাদের যে কোন বিষয় বা পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম ও মনে রাখার সহজ টেকনিক মেনে চললে স্মৃতিশক্তি ভাল থাকে। নিচে তা উল্লেখ করা হল।

ইতিবাচক চিন্তা করুন

নেতিবাচক চিন্তা বা কথা বার্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিক মন মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ খুবই গভীর। তাই নিজের মনের পরিচর্যা করুন। নিজেকে নিয়োজিত রাখুন সৃষ্টিশীল কাজ-কর্মে।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন

রাগ মন ও মস্তিষ্কের খুবই কাছের শত্রু। আমরা যখন রেগে যাই তখন মানুষের শরীরে নিঃসৃত হয় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ পদার্থ যা আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

মেডিটেশন বা বেয়াম করুন

নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকালে বা সন্ধ্যায় খোলা মাঠে হাঁটুন। এ অভ্যাসগুলো নিয়মিত করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কে তথ্য ধারণ করার ক্ষমতা বাড়ায়। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা চেতনা করার ক্ষমতার ওপর। নিয়মিত মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

সারাক্ষণ একটানা কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। ক্লান্তি মস্তিষ্ক আমাদের কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমান। একটানা দীর্ঘ কাজের ফাঁকে একটু ব্রেক দিন। কাজের মাঝে  মনোনিবেশ করা সহজ হবে।

পড়া মনে রাখার কতগুলো টেকনিকঃ 

১. আত্মবিশ্বাসঃ 

যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল আত্মবিশ্বাস। নিজের মনকে বোঝাতে হবে যে, পড়াশোনা করা অনেক সহজ বিষয় এবং আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তাহলে অনেক কঠিন পড়াটাও নিজের কাছে সহজ মনে হবে। কোনো বিষয়ে মনের ভিতরে একবার ভয় ঢুকে গেলে সেটা আর সহজে মনে রাখা অনেক কঠিন। আর পড়ালেখা করার উত্তম সময় হলো ভোর ৪টা থেকে। সকালে মস্তিষ্ক ও মন ফ্রেশ থাকে।

২। কনসেপ্ট চার্ট আকাঃ 

পড়া মনে রাখার ভালো কৌশল হলো কনসেপ্ট চার্ট আকা । এ পদ্ধতিতে কোনো একটি বিষয় শেখার আগে পুরো বিষয়টি কয়েকটি অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের জন্য একটি করে সারমর্ম লিখে রাখা । তারপর খাতায় একটি চিত্র এঁকে প্রতিটি সারমর্মকে একেকটি পয়েন্ট এ লিখে রাখা ।  পয়েন্ট গুলো প্রতিদিন চোখ বোলালেই বিষয়টি সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে। এটি একটি পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক ধারণা।

৩. ছন্দ মনে রাখাঃ 

যেকোনো বিষয়ের কঠিন টপিক গুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা সহজ হয়। যেমন, রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ এই শব্দটি মনে রাখা। শব্দটি প্রতিটি রঙের প্রথম অক্ষর দিয়ে সাজানো হয়েছে । এমনিভাবে সকল কারকের সহজ  সূত্র মনে রাখার কৌশল হল “পাগুটাদিপ্তি”। এর মানে হল, পা-তে পাগলে কি না বলে, গু-তে গুরুজনে কর ভক্তি, টা-তে টাকায় কিনা হয়, দি-তে দিনে দয়া কর, প-তে পথে হল দেরি, তি-তে তিলে তৈল হয়। 

৪। কালোরেখা টানাঃ 

কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখার আরেকটি সহজ টেকনিক হল কালো রেখা টানা বা আন্ডারলাইন করা। জন্ম সাল, ঘটনা, মৃত্যু সাল, দিন, মাস ইত্যাদি মনে রাখতে সহজ হয়। কো কঠিন পড়া বা বিষয় বারবার মনে রাখতে বা সহজে খুঁজে পেতে আন্ডার লাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

৫. উচ্চঃস্বরে পড়াঃ 

পড়া মুখস্থ করার সময় উচ্চঃস্বরে পড়তে হবে। এই পদ্ধতিতে কথাগুলো কানে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে সহজে মুখস্থ করা যায়। শব্দছাড়া পড়ালেখা করলে একসময় পড়ার গতি আস্তে আস্তে কমে যায় এবং পড়া শেখার আগ্রহ হারিয়ে যায়। আর আগ্রহ না থাকলে পড়া মুখস্থ করার কিছুক্ষণ পরেই তা মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যায়। পড়া মুখস্থ হয়ে যাওয়ার পর সেটা বারবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এভাবে পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে থাকে।

৬. নিজের পড়া নিজের মতো করে পড়া 

ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে। স্যারদের লেকচার ও পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিয়ে নিজে নিজে নোট তৈরি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একটি প্রশ্নের উত্তর কয়েক ভাবে লেখার অভ্যাস করতে হবে। নিজের তৈরি করা নোট বা পড়া নিজের কাছে অনেক সহজ মনে হবে। পরবর্তী সময়ে নিজের লেখাটি কয়েকবার পড়লে অনায়াসেই সেটি আয়ত্ত হয়ে যাবে এবং নিজের মতো করে সহজেই লেখা যাবে। আর এভাবে পড়লে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কাও খুবই কম থাকে।

৭. নতুন-পুরনোর সংমিশ্রণ

নতুন কিছু শেখার সময় একই ধরনের আরো বিষয় বা পড়া মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ একেবারে নতুন কোনো কিছু বা তথ্য ধারণ করতে মস্তিষ্কের বেগ পেতে হয়। কিন্তু পুরনো তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্য আয়ত্ত করতে পারে খুব সহজেই। উদাহরণস্বরূপ, ‘সিডি’ শব্দটি শেখার ক্ষেত্রে আগের দিনের কলের গানের কথা মনে রাখলে শব্দটা সহজেই মনে থাকবে। শুধু মনে রাখতে হবে, শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা কী একই নাকি ভিন্ন।

৮. কেনর  শব্দের উত্তর খোঁজা

এ কথাটা প্রধানত বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের মনে সব সময় নতুন বিষয় জানার ইচ্ছা প্রবল থাকতে হবে। জানার জন্য মন নিয়ে কোনো কিছু শিখতে চাইলে সেটা সহজে মনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর কোনো বিষয় বা অধ্যায় পড়ার পর সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বা যে কোন ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হবে। তবেই বিজ্ঞানের সূত্র ও সমাধানগুলো সহজে আয়ত্ত করা যাবে।

৯. কল্পনায় ছবি আঁকা

কল্পনায় বিষয়সদৃশ একটি ছবি আঁকতে হবে মনের ভিতর। গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে আশপাশের মানুষ বা বস্তুর সাথে মিলিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই বিষয়টি নিয়ে পড়তে বসলেই মানুষ কিংবা বস্তুটির কল্পনায় চলে আসবে। এ পদ্ধতিতে কোনো কিছু শিখলে সেটা সহজেই ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আর মস্তিষ্ককে যত বেশি প্রয়োগ করা যাবে, তত বেশি ধারালো হয় ও পড়া বেশিক্ষন মনে থাকে। 

১০. পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখা

কোনো বিষয় পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি খাতায় লিখার অভ্যাস করতে হবে। একবার পড়ে সেটা কয়েকবার লিখলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। পড়া ও লেখা একসঙ্গে হলে সেটা মুখস্থ হবে তাড়াতাড়ি। পরবর্তী সময়ে সেই প্রশ্নটির উত্তর খাতায় লিখতে গেলে অনায়াসে মনে আসবে। এ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে হাতের লেখা দ্রুত ও সুন্দর করতে সাহায্য করে। পড়া দীর্ঘদিন মনে রাখতে হলে শেখার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি লেখারও অভ্যাস করতে হবে।

১১. অর্থ জেনে পড়া

ইংরেজি পড়ার সময় শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজি ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের সাথে সাথে অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে সম্পূর্ণ পড়া বিফলে যাবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ইংরেজি বানিয়ে বানিয়ে লেখার চর্চা করা খুবই জরুরি। কারণ পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজি শব্দের অর্থভাণ্ডার বৃদ্দ্বি করতে পারলে কোনো পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

১২. গল্পের ছলে পড়া শেখা

যেকোনো বিষয় ক্লাসে পড়ার পর সেটা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার দেওয়ার সময় গল্পের মতো করে উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মনের কথাগুলো প্রকাশ করতে পারবে। সবার কথাগুলো একত্র করলে অধ্যায়টি সম্পর্কে সবার ধারণাটা স্বচ্ছ হয়ে যাবে । কোনো অধ্যায় বা বিষয় খণ্ড খণ্ড করে না শিখে আগে পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে সঠিক স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। পরে শেখার সময় আলাদা করে মাথায় গেথে নিতে হবে। তাহলে যেকোনো বিষয় একটা গল্পের মতো মনে হবে।

১৩. মুখস্থ বিদ্যাকে “না” বলা

মুখস্থ বিদ্যা সৃজনশীলতা বা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়, পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোনো কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেই পড়া বা বিষয় বেশি দিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সচেতনভাবে কোনো কিছু মুখস্থ করা যাবে না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্য, যেমনঃ সাল, তারিখ, মাস, বইয়ের নাম, ব্যক্তির নাম, স্থানের নাম ইত্যাদি মনে রাখতে হবে। কি কি  মনে রাখছেন এবং এর সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের কি কি মিল আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞানের বা অংকের কোনো সূত্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আয়ত্ত করতে সেটা আগে  ভালভাবে বুঝে তারপর মুখস্থ করতে হবে।

ভাইভা বা ইন্টারভিউতে সফলকাম হওয়ার কিছু সাজেশন

নির্দিষ্ট তারিখে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট আগে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন। ছেলেদের ক্ষেত্রে ফরমাল ড্রেস ফুলহাতা শার্ট এবং প্যান্ট পরে ভাইভা বোর্ডে যাওয়া উচিত। আর মেয়েদেরও ফরমাল পরিপাটি পোশাক পরা উচিত। সবচেয়ে বড় কথা হল পোশাক হতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শালীন এবং মার্জিত।

সুন্দর উপস্থাপন জরুরি

ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢোকার সাথে সাথে সম্ভাষণ করুন। প্রবেশের পর অনুমতি নিয়ে আপনার জন্য রাখা নির্ধারিত সিটে বসুন। এরপর সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যথাযথ চেষ্টা করুন। পরীক্ষায় ভাল উপস্থাপনার জন্য পাঁচ নম্বর থাকবে। তাই উপস্থাপনা সুন্দর, সাবলীল এবং মার্জিত হতে হবে। ভাইভা পরীক্ষার সময় আপনার মধ্যে যেন কোনো রকম হতাশা বা ক্লান্তির ছাপ না দেখা যায়, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে।

যা জানতে হবে

মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস বা বিষয় নেই। দেশ ও দেশের বাইরের আন্তর্জাতিক খোঁজখবর কতটুকু রাখেন, বাংলাদেশ ও বিশ্ব সাধারণ জ্ঞানে আপনি কতটা ভালো, বেসিক জ্ঞান কেমন ভাইভা পরীক্ষায় মূলত এ বিষয়গুলোই যাচাই করা হয়। আপনি যদি বিজ্ঞান শাখা, বাণিজ্য শাখা অথবা মানবিক শাখা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র-ছাত্রী হয়ে থাকেন তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বেসিক জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় যান। এ অংশ থেকে ১০ নম্বর দেওয়া হবে। এ ছাড়াও নিজ জেলার মোট আয়তন, মোট জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, কিসের জন্য বিখ্যাত, বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা রাখুন।

চাই আত্মবিশ্বাস রাখা 

উত্তর জানা না থাকলে বানিয়ে বানিয়ে না বলে সরাসরি বলতে হবে, দুঃখিত স্যার, উত্তরটি আমার জানা নেই। প্রশ্ন ভালো করে বুঝেশুনে  প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। উঁচু গলায় প্রশ্ন করা হলেও আপনি উঁচু গলায় উত্তর দেবেন না। আবেগ আপ্লূত হয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে না। 

সব প্রশ্নই যে একই রকম হবে এবং সেগুলো সব আপনার জানা থাকবে, তা কিন্তু নয়। জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে আপনি পক্ষপাতিত্ব না করে দুটি দিকই যৌক্তিকভাবে তুলে ধরুন। 

কোনো বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়বেন না। দ্বিমত পোষণ করলে তা জানানোর আগে বিনয়ের সঙ্গে বলে নিবেন যে, ‘মাফ করবেন’ বা ‘কিছু মনে করবেন না’ ।

প্রশ্নের ধরণ খেয়াল রাখা

প্রশ্নকর্তা আপনাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর যদি বাংলায় প্রশ্ন করে তাহলে বাংলায় উত্তর দিতে হবে। আঞ্চলিক ভাষার টান বাদ দিয়ে শুদ্ধ উচ্চারণে উত্তর দিতে হবে। অনেক সময় প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন ছুড়ে মেরে প্রার্থীকে বিচলিত করা হয়। এ সময় প্রশ্ন করায় বিচলিত না হয়ে নিজেকে শান্ত রাখুন এবং যৌক্তিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন।

ঘাবড়ে যাবেন না

যে কোন মৌখিক পরীক্ষার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। আপনাকে বেশি সময় ধরে প্রশ্নকর্তারা প্রশ্ন করলে ঘাবড়াবেন না। বরং এতে করে ধরে নিতে হবে যে, তাঁরা আপনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং চাকরির জন্য আপনি যোগ্য মনে করেই যাচাই করছেন। যতটুকু সম্ভব নিজের প্রতি আস্থা রাখুন।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে, পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম ও মনে রাখার সহজ টেকনিক মেনে চললে আমরা যে কোন পরীক্ষায় বা ইন্টারভিউতে ভাল ফলাফল করতে পারব এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আমরা পৌছাতে পারব। লেখাটি ভাল লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবে না।

Comments

Popular posts from this blog

ক্ষুদ্র ব্যবসাকে বড় করার জন্য এই বিষয় গুলি আজ থেকেই কাজে লাগান

অভ্যন্তর নকশা ব্যবসায়

মশলা ব্যবসা